ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

টানা এক মাস ধরে দাবদাহে রেকর্ড

আপলোড সময় : ৩০-০৪-২০২৪ ১১:০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ৩০-০৪-২০২৪ ১১:০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
টানা এক মাস ধরে দাবদাহে রেকর্ড সংগৃহীত
বৈশাখের টানা খরতাপে পুড়ছে দেশ। প্রতিদিনই বাড়ছে অসহনীয় তাপমাত্রা। গত এক মাস ধরে চলছে মরুভূমির মতো উষ্ণতা। দেশের বৃহতাংশে বর্তমানে উত্তপ্ত চুল্লির অবস্থা বিরাজমান। হাঁপিয়ে উঠেছে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। অসহনীয় গরমে বিবর্ণ প্রাণ-প্রকৃতি। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে।

বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা ও রংপুর বিভাগের অধিবাসীরা রীতিমতো লু হাওয়ার অনুভূতিতে হাঁসফাঁস করছেন। বহু অঞ্চলে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে দূষণ আর গরমে বিপর্যস্ত।

আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে মে-জুন পর্যন্ত। মাঝে-মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে কালবৈশাখী,বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকলেও এবারের গ্রীষ্মকাল হবে প্রলম্বিত ও দীর্ঘস্থায়ী— যা জনজীবনে বিরূপ ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রতিদিন প্রাণঘাতি গরমে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হচ্ছে। গতকাল সোমবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে হিট স্ট্রোকে অন্তত: ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র গরমে স্কুলে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বহু ছাত্র-ছাত্রী। এরমধ্যে নড়াইলের লোহাগড়ার ইতনা মাধ্যমিক স্কুল এন্ড কলেজের ১২ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কুমিল্লার মুরাদনগরেরতায়মোস বেগম হাইস্কুলে ৭ শিক্ষার্থী,টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ফলদা শরিফুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

দেশের আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চূয়াডাঙ্গায়, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের ১৫ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করেছে। রাজধানীর তাপমাত্রাও গতকাল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি রাজধানীতে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ২০ এপ্রিল রাজধানীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গতকাল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস,ঈশ্বরদী ৪২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস,খুলনায় তাপমাত্রা ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মোংলায় ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস,সাতক্ষীরায় ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস,যশোরে ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস,কুমারখালীতে ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস,টাঙ্গাইলে ৪০.৮ ডিগ্রি,ফরিদপুরে ৪১.২ ডিগ্রি,গোপালগঞ্জ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, চার-পাঁচ দিন বৃষ্টির পর ৭ই মে থেকে আবারও বাড়বে তাপমাত্রা। মে মাসজুড়ে বেশ কয়েকটি তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ রয়ে যেতে পারে। 

আবহাওয়াবিদ ড.আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গত মার্চ মাসের শেষভাগ থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে শুরু করে। সেই তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে। এটা ৭৬ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড। এর আগে গত বছর সর্বোচ্চ ১৬ দিন টানা তাপপ্রবাহ ছিল।

আর ২০১০ সালের এপ্রিল রাজশাহীতে ২০ দিন তাপপ্রবাহ বইলেও তা টানা ছিল না। আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সূর্যকিরণের সময় বেড়েছে। প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা আমরা সূর্যকিরণ পাচ্ছি। বায়ুপ্রবাহ কম। এ জন্য প্রায় সারাদেশেই তাপপ্রবাহ বিদ্যমান আছে।

এর মধ্যে আবার বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে তাপমাত্রা অল্প কমলেও গরমের অনুভূতি একই রকম আছে। আজ সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকবে। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকলে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে। আগামী ২ মের পর চলমান তাপপ্রবাহের অবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।

ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, প্রতি বছরই মে মাসে তাপপ্রবাহ থাকে। এ কারণে আমরা আশঙ্কা করছি যে মে মাসেও এ রকম তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। তবে এর ব্যাপ্তিকাল ও এরিয়া কভারেজ অনেকটাই কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর উত্তপ্ত থাকায় জলীয়বাষ্প কম সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় এ মৌসুমে তাপদাহ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এদিকে ৩ মে ভারি ও অতি ভারি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে উত্তর-পূর্ব হাওর এলাকার কৃষকদের দ্রুত ফসল ঘরে তোলার পরামর্শ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।

আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, চট্টগ্রাম ও সিলেটের কিছু অঞ্চল ছাড়া দেশের বাকি অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মে’র প্রথম সপ্তাহে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। আগামী দু’দিন তাপমাত্রা মোটামুটি এমনই থাকতে পারে। তবে তাপমাত্রা যাই থাকুক গরমের অনুভূতি বাড়তে পারে। বৃষ্টির আগে এমন অসহনীয় অনুভূতি হয়। 

চূয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার বিকেল তিনটায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৩ শতাংশ।

এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৫ সালে ২ জুন চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ২০১২ সালে ৪ জুন চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ